ঢাকা মেট্রোরেলের সকল প্রযুক্তিগত তথ্য
ঢাকা মেট্রোরেল বাংলাদেশের প্রথম দ্রুতগামী গণপরিবহন ব্যবস্থা, যা রাজধানী ঢাকার যানজট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। নিচে এর প্রধান প্রযুক্তিগত তথ্য দেওয়া হলো:
১. প্রকল্পের বিবরণ
প্রকল্পের নাম: ঢাকা মেট্রোরেল (এমআরটি লাইন-৬)
দৈর্ঘ্য: ২০.১০ কিমি (উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত)
স্টেশন সংখ্যা: ১৬টি (উত্তরা উত্তর থেকে মতিঝিল)
ধরণ: এলিভেটেড (উচ্চায়িত) মেট্রোরেল
গতি: ১০০ কিমি/ঘণ্টা (সর্বোচ্চ), ৩০-৪০ কিমি/ঘণ্টা (গড়)
যাত্রী ধারণক্ষমতা: প্রতিদিন ৫ লক্ষ (প্রথম পর্যায়ে), ভবিষ্যতে ১০ লক্ষ+
২. প্রযুক্তি ও রোলিং স্টক
ট্রেন সেট: ৬ কোচের ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট (EMU)
প্রস্তুতকারক: মিতসুবিশি-হিতাচি (জাপান)
বিদ্যুৎ ব্যবস্থা: ৭৫০V DC (তৃতীয় রেল থেকে বিদ্যুৎ গ্রহণ)
সংকেত ও নিরাপত্তা: ATO (অটোমেটিক ট্রেন অপারেশন) ও CBTC (কমিউনিকেশন-বেসড ট্রেন কন্ট্রোল)
লাইন গেজ: স্ট্যান্ডার্ড গেজ (১,৪৩৫ মিমি)
৩. স্টেশন ও রুট
মূল রুট: উত্তরা উত্তর → উত্তরা সেন্টার → পল্লবী → মিরপুর-১১ → মিরপুর-১০ → কাজীপাড়া → শেওড়াপাড়া → আগারগাঁও → বিজয় সরণি → ফার্মগেট → কারওয়ান বাজার → শাহবাগ → ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় → সচিবালয় → মতিঝিল
স্টেশন ডিজাইন: আধুনিক, এসি সুবিধাযুক্ত, এলিভেটেড প্ল্যাটফর্ম
অ্যাকসেসিবিলিটি: লিফট, এসকেলেটর, ও হুইলচেয়ার র্যাম্প
৪. নির্মাণ ও অর্থায়ন
নির্মাণকারী: ডিএমটিসিএল (ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড)
প্রধান ঠিকাদার: ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি (ITD-ITD Cementation)
খরচ: প্রায় ৩৩,০০০ কোটি টাকা (জাপানের JICA-এর ঋণ সহায়তায়)
উদ্বোধন: ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে (আংশিক চালু), পূর্ণসংখ্যক চালু ২০২৪-২৫
৫. নিরাপত্তা ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি
অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা: স্বয়ংক্রিয় ফায়ার অ্যালার্ম ও স্প্রিংকলার
ভূমিকম্প প্রতিরোধী: রিখটার স্কেল ৮.৫ পর্যন্ত সহনশীল
সৌরশক্তি ব্যবহার: কিছু স্টেশনে সোলার প্যানেল স্থাপন
৬. ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
লাইন-১ (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-কেরানীগঞ্জ)
লাইন-৫ (নর্দার্ন রুট)
লাইন-৬ সম্প্রসারণ (মতিঝিল থেকে কমলাপুর)
সর্বশেষ আপডেট: ঢাকা মেট্রোরেলের প্রথম পর্যায় (উত্তরা থেকে আগারগাঁও) চালু হয়েছে। পুরো লাইন চালু হলে এটি ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থাকে বিপ্লবিত করবে!
ℹ️ আরও জানতে: DMTCL Official Website
ঢাকা মেট্রোরেলের সম্পূর্ণ টেকনিক্যাল ডিটেইলস (বাংলায়):
১. বেসিক ইনফো:
প্রকল্প নাম: ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট (এমআরটি লাইন-৬)
মোট দৈর্ঘ্য: ২০.১০ কিমি (উত্তরা উত্তর → মতিঝিল)
স্টেশন সংখ্যা: ১৬টি
ট্র্যাক টাইপ: এলিভেটেড (উড়াল সড়ক)
গতি:
সর্বোচ্চ: ১০০ কিমি/ঘণ্টা
অপারেশনাল: ৩০-৪০ কিমি/ঘণ্টা
২. ট্রেন সিস্টেম:
ট্রেন সেট:
মডেল: হিতাচি-মিতসুবিশি তৈরি ৬ কোচের EMU (ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট)
ক্যাপাসিটি: প্রতি ট্রেনে ১,৮০০ যাত্রী (ঘণ্টায় ৬০,০০০ যাত্রী পরিবহন ক্ষমতা)
পাওয়ার সাপ্লাই:
ভোল্টেজ: ৭৫০V DC
পাওয়ার সোর্স: থার্ড রেল সিস্টেম
৩. সিগন্যালিং ও কন্ট্রোল:
টেকনোলজি: CBTC (কমিউনিকেশন-বেজড ট্রেন কন্ট্রোল)
অপারেশন মোড:
ATO (অটোমেটিক ট্রেন অপারেশন)
ড্রাইভার মনিটরিং সহ সেমি-অটোমেটিক মোড
৪. স্টেশন ডিটেইলস:
আর্কিটেকচার: মডার্ন জাপানিজ ডিজাইন
ফিচার্স:
প্ল্যাটফর্ম স্ক্রিন ডোর (PSD)
এসি ও এস্কেলেটর
হুইলচেয়ার অ্যাক্সেস
ইমার্জেন্সি সিস্টেম:
অটোমেটিক ফায়ার অ্যালার্ম
স্মোক ডিটেকশন
৫. কনস্ট্রাকশন ডিটেইলস:
ভায়াডাক্ট হাইট: ১২ মিটার (গড়)
পিলার ডিজাইন: সিসমিক রেজিস্ট্যান্ট (৮.৫ মাত্রার ভূমিকম্প সহনশীল)
ট্র্যাক গেজ: ১,৪৩৫ মিমি (স্ট্যান্ডার্ড গেজ)
৬. সেফটি ফিচার্স:
অটোমেটিক ট্রেন স্টপ (ATS)
ইমার্জেন্সি ব্রেকিং সিস্টেম
CCTV সার্ভিলেন্স
৭. টিকেটিং সিস্টেম:
স্মার্ট কার্ড বেসড
কন্ট্যাক্টলেস পেমেন্ট অপশন
৮. এনার্জি এফিসিয়েন্সি:
রিজেনারেটিভ ব্রেকিং সিস্টেম (৩০% এনার্জি সেভিং)
সোলার প্যানেল (কিছু স্টেশনে)
৯. কস্ট অ্যান্ড ফান্ডিং:
মোট খরচ: ~৩৩,০০০ কোটি টাকা
ফান্ডিং সোর্স: JICA (জাপান)
১০. অপারেশনাল টাইমলাইন:
ফেজ ১ (উত্তরা-আগারগাঁও): ডিসেম্বর ২০২৩
ফুল অপারেশন: ২০২৫
১১. ফিউচার এক্সপেনশন:
মতিঝিল → কমলাপুর (২.৫ কিমি)
লাইন-১ (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ)
স্পেশাল নোট:
বাংলাদেশে প্রথম কোনো রেল সিস্টেম যেখানে সম্পূর্ণ অটোমেটিক সিগন্যালিং ব্যবহৃত হয়েছে।
জাপানি টেকনোলজি ব্যবহার করে বিশ্বমানের স্ট্যান্ডার্ডে তৈরি।
১. ট্রেনের ইন্টেরিয়র ডিজাইন
সিটিং অ্যারেঞ্জমেন্ট:
২+২ সিস্টেম (প্রতি সারিতে ৪ আসন, ২টি করে উভয় পাশে)
স্টেইনলেস স্টিল ও ফায়ার-রেটার্ডেন্ট প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি
প্রায়োরিটি সিট: গর্ভবতী, প্রতিবন্ধী ও বয়স্কদের জন্য রঙিন মার্কিং
স্ট্যান্ডিং স্পেস:
প্রতি কোচে ২০-২৫ জন দাঁড়িয়ে যেতে পারে
হ্যান্ডল ও ভার্টিক্যাল পোল (অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল কোটিং)
লাইটিং ও ভেন্টিলেশন:
LED লাইট (এনার্জি-সেভিং)
অটোমেটিক এয়ার কন্ডিশনিং (২৫°C তাপমাত্রা কন্ট্রোল)
সেফিটি ফিচার্স:
ইমার্জেন্সি কমিউনিকেশন ইউনিট (ড্রাইভারের সাথে কথা বলার সুবিধা)
ফায়ার এক্সটিংগুইশার (প্রতি কোচে ২টি)
ইমার্জেন্সি হ্যামার (জরুরি অবস্থায় জানালা ভাঙার সরঞ্জাম)
২. মেইন্টেনেন্স সিস্টেম
প্রেডিক্টিভ মেইন্টেনেন্স:
IoT সেন্সর দ্বারা ট্রেনের মোটর, ব্রেক, ব্যাটারি মনিটরিং
ভাইব্রেশন সেন্সর দিয়ে যান্ত্রিক ত্রুটি শনাক্ত
রুটিন চেকআপ:
ডেইলি ইনস্পেকশন: ব্রেক, লাইট, ডোর সিস্টেম
মাসিক সার্ভিস: এয়ার কন্ডিশনিং, পাওয়ার সাপ্লাই
ইয়ার্লি ওভারহল: ট্র্যাকশন মোটর, কন্ট্রোল সিস্টেম
ডিপো ফ্যাসিলিটি:
উত্তরা ডিপোতে ১২টি ট্রেন একসাথে মেইন্টেন করা যায়
অটোমেটিক ওয়াশিং প্লান্ট (ট্রেন পরিষ্কারের জন্য)
৩. রিয়েল-টাইম মনিটরিং সিস্টেম
কন্ট্রোল সেন্টার (OCC):
আগারগাঁওয়ে অবস্থিত প্রধান কন্ট্রোল রুম
SCADA সিস্টেম দিয়ে বিদ্যুৎ, সিগন্যাল, ট্রেন পজিশন ট্র্যাক করা
ট্রেন ট্র্যাকিং:
GPS + RFID ট্যাগ দিয়ে সঠিক লোকেশন
স্ক্রিনে দেখায়:
ট্রেনের গতি
ডিলে (যদি থাকে)
ইমার্জেন্সি অ্যালার্ট
প্যাসেঞ্জার ইনফো:
স্টেশন ডিসপ্লেতে পরবর্তী ট্রেনের সময় দেখায়
মোবাইল অ্যাপ (DMTCL) দিয়ে লাইভ আপডেট
গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি
ড্যাশক্যাম: ট্রেনের সামনে লাগানো থাকে যেকোনো বাধা রেকর্ড করতে
অটো-ডায়াগনস্টিক সিস্টেম: স্বয়ংক্রিয়ভাবে ত্রুটি রিপোর্ট করে
ব্যাকআপ পাওয়ার: বিদ্যুৎ চলে গেলে ব্যাটারিতে ৩০ মিনিট চালানো যায়
📌 মনে রাখবেন:
প্রতি ট্রেন ১৫ বছর পর্যন্ত চালানো যাবে (সঠিক মেইন্টেনেন্সে)
জাপানি প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে ৯৯.৯% অ্যাকুরেসি
ℹ️ আরও জানতে: DMTCL রেগুলার ইনস্পেকশন রিপোর্ট
ঢাকা মেট্রোরেল বিশ্বমানের নিরাপত্তা সিস্টেম দ্বারা সজ্জিত, যা যাত্রী ও স্টাফ সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। নিচে বিস্তারিত দেওয়া হলো:
১. ট্রেন ও স্টেশনের নিরাপত্তা ফিচার
অগ্নি নিরাপত্তা (Fire Safety)
অটোমেটিক ফায়ার অ্যালার্ম সিস্টেম (স্টেশন ও ট্রেনে)
স্মোক ডিটেক্টর ও স্প্রিংকলার
ফায়ার এক্সটিংগুইশার (প্রতি কোচে ২টি)
ফায়ার-রেটার্ডেন্ট ম্যাটেরিয়াল (ট্রেনের আসন, দেয়াল)
ইমার্জেন্সি ব্রেকিং সিস্টেম
অটোমেটিক ট্রেন স্টপ (ATS) – কোনো বাধা শনাক্ত হলে ট্রেন নিজে থেকেই থামবে
ইমার্জেন্সি ব্রেক হ্যান্ডল (যাত্রীরা জরুরি অবস্থায় ট্রেন থামাতে পারবে)
ডোর সেফটি
প্ল্যাটফর্ম স্ক্রিন ডোর (PSD) – ট্রেন দরজা খুললে প্ল্যাটফর্মের দরজা খোলে
অটোমেটিক সেন্সর – কোনো বাধা (ব্যাগ/হাত) থাকলে দরজা বন্ধ হবে না
২. স্টেশনের নিরাপত্তা
সিসি ক্যামেরা (CCTV সার্ভিলেন্স)
২৪/৭ মনিটরিং (কন্ট্রোল রুম থেকে)
ফেসিয়াল রিকগনিশন সিস্টেম (সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে ট্র্যাক করতে)
ইমার্জেন্সি এক্সিট
সবুজ সাইনবোর্ড দিয়ে মার্ক করা
ফায়ার এসকেপ রুট (আগুনের সময় নিরাপদে বের হওয়ার পথ)
মেডিকেল সাপোর্ট
ফার্স্ট এইড বক্স (প্রতি স্টেশনে)
ইমার্জেন্সি কল বাটন (সহজে হেল্পের জন্য)
৩. যাত্রীদের জন্য সেফটি গাইডলাইন
✅ ট্রেনে ওঠার সময়:
হুইলচেয়ার/বেবি স্টলার ব্যবহারকারীরা প্রায়োরিটি সিট ব্যবহার করুন
দরজা বন্ধ হওয়ার সময় ট্রেনে উঠবেন না
✅ স্টেশনে:
ইলেকট্রিক ট্র্যাক/রেল স্পর্শ করবেন না
প্ল্যাটফর্মের হলুদ লাইন থেকে দূরে থাকুন
❌ নিষিদ্ধ কাজ:
ধূমপান (স্টেশন ও ট্রেনে সম্পূর্ণ নিষেধ)
ট্রেনের জানালা/দরজা খোলার চেষ্টা করা
অপ্রয়োজনে ইমার্জেন্সি ব্রেক চাপা
৪. জরুরি অবস্থায় করণীয়
🆘 ট্রেনে সমস্যা হলে:
ইমার্জেন্সি ইন্টারকম বাটন চাপুন (ড্রাইভারের সাথে কথা বলুন)
ফায়ার এক্সটিংগুইশার ব্যবহার করুন
ট্রেনের ভিতরে থাকুন (বাইরে লাফ দিবেন না)
🆘 স্টেশনে সমস্যা হলে:
নিকটস্থ স্টাফ/পুলিশকে জানান
ইমার্জেন্সি কল বাটন প্রেস করুন
৫. বিশেষ নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ
সব কর্মীকে ফায়ার সেফটি, ইমার্জেন্সি ইভাকুয়েশন ট্রেনিং দেওয়া হয়
যাত্রীদের জন্য সেফটি অ্যানাউন্সমেন্ট (ট্রেন ও স্টেশনে)
ℹ️ জরুরি নম্বর:
মেট্রোরেল হেল্পলাইন: DMTCL কন্টাক্ট
🚆 সতর্ক থাকুন, নিরাপদে চলুন!
ঢাকা মেট্রোরেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিশ্বমানের, তবে সচেতনতাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
0 Response to "ঢাকা মেট্রোরেলের সকল তথ্য"
Post a Comment