২৬-০২-২৪ । শবে-বরাতের পরের দিন। সকাল হতে মনটা বেশ উড়ু উড়ু। বই মেলা শেষ হয়ে আসছে, অথচ এখনো যাওয়া হয়নি। একটা সময় পিতার শিক্ষকতার কারনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে থাকতাম। ১৯৮২ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত আমার পদচারনা ছিল ক্যাম্পাসের সবুজ চত্বরে।
বই মেলা শুরু হলে, প্রতি বিকেলেই আমার গন্তব্য ছিল বাংল একাডেমি। আগে মেলা বসতো বাংলা একাডেমী চত্বরে। বেশ জমজমাট ছিল বই মেলা। নামী-দামী লেখক,প্রকাশক আর অগুন্তি পাঠকের সমাগম মাতিয়ে রাখতো বই মেলা। বট গাছের নিচে এবং তার পাশে সামিয়ানার নিচে স্টেজে গান,নাটক, কবিতা আবৃত্তি চলতো বিকেল থেকে মেলা শেষ না গওয়া পর্যন্ত।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEj7Y7StkF-P6x8QXgQjOY_pgIyihmt2Penelh4XdxyGh17TFkjxEzogqgeTS5g3LPW_B1wMvBIlIBZWvo4mDCP_IwRy7FdohvFlD3yocxGSUKcjrZWlrTxd5BemSyZc_PvU1pJNMrBfX-dEvpa-HOOTZ7g31PVHnJU-_oMq3iSYkfxrGdMgDc035-lmILA/w461-h297/420752_355892994432481_100000353490811_1137084_665211434_n.jpg) |
অমর একুশে বই মেলা,বাংলা একাডেমী চত্বর ২১/০২/২০১২
|
প্রখ্যাত সাহ্যিতিক হুুমায়ূন আহমেদ যে ষ্টলে বসতেন,সেখানে উপচে পড়া ভীড়। অটোগ্রাফ শিকারীদের কবলে তিনি। হুমায়ূন আহমেদ মেলায় আসতেন পুলিশ প্রহরায়। এদিক দিয়ে হয়তো দেখা গেল কবি নির্মলেন্দু গুন হেটে চলছেন কাধে ঝোলা নিয়ে। পিছনে ভক্তকুল।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjgNyqeCiQNUy5RLtkg8N2VQHRuyMJIE2LN90xIFH7jF1OB4kJVMBsZ3m7Jj5F4_Zv4g_GQcd31Hs4n0kALdCNlbNnfRgwxGkJawk32aMSWOy0uZTQRP18j6svqyHsI7zyHqaK_r_HNUFii2oyRO9sAB8Zeaw7dzGx0d1RR6qtsCHqEdw95u6UHAfPUWDc/w301-h432/latest%20pic%20020.jpg) |
কবি নির্মলেন্দু গুন,বই মেলা ২০১০ |
|
|
|
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjJDVZ1DYhpnS8NW1c_g-a1kecsXCSXnUyrIXdRULkm3Y2M1F4RaUpmIoyiGY5ZalA4CPn8GaHKCQQ0ckJZMzHaqh9T43WrlnJUV9i9P9bjV0b39JlLriZInz_ZyOoC7KU0NkBH5NNZMaNtanuq9-cGW8qj8luBmvBYLVzEJLZPxsKups-3bl0tipbenaM/w306-h387/Boilmela-5.jpg) |
অটোগ্রাফ প্রদানরত লেখক ইমদাদুল হক মিলন
|
এদিক ওদিক তাকালে দেখা যেত সদাহাস্য শিশু সাহিত্যিক লুৎফর রহমান রিটন কোন বেসরকারী টিভি চ্যানেলের মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে কোন উঠতি লেখক বা কবির সাক্ষাৎকার নিতে ব্যস্ত। সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসূল হককে মেলায় দেখেছি প্রায় প্রতিদিন। লিটল-ম্যাগ চত্বরে তরুণ কবিদের আড্ডা ছিল দেখার মতো। প্রয়াত কবি খোন্দকার আশরাফ হোসেন ছিলেন প্রায়ই আড্ডার মধ্যমনি।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjmYmZrnLYWj8-6t30rSkhFTCV7vuBtU23r9A0xpfugk4Rl3xoTWAADAp5Ft_PXk6n2C3I-aE17UUCbg3q20FfZJ2gxxNjrBqmSpamMFZIqZbOkxpg__fNQIThYaHchI6ScfHI8lnJ-IYwRnS8U9hkTbZCEVxrD4E3MggCQRFg92d9rETTciOuZwu6uXjA/w477-h317/428336_355894531098994_100000353490811_1137087_1777557_n.jpg) |
বাংলা একাডেমী চত্বরে বইমেলা ২০১২ |
|
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEh74Bov6_gVISJKM4LAx8c6RqKxhPaQkySPO-Ka7pmemHXDfa7W7ZNtAxs8yDkwrzdzEoftrJnX9tV1BZiDZVd11Evmm5pBXKUqnVaz5cvaN6rUbBNdqTpzRdKniB-cWY4xM6IvufKFsyQJ2q5EBcKUUpepNc6b9MrKxDHfE21sJSoJs1HLLG1-dGizzCQ/w469-h296/latest%20pic%20010.jpg) |
বই মেলা ২০১০,বাংলা একাডেমি চত্বর
|
কিছু কিছু যুবকেরা বিকেল থেকে ভীড় করতো শুধু সুন্দরী ললনাদের দেখার জন্য। অকাতরে প্রেম নিবেদন চলতো। হাতের মুঠোয় গুজে দিতো ভালোবাসার বানীসহ টেলিফোন নম্বর। কারো কারো ভাগ্যে হয়তো শিঁকে ছিড়তো। অনেকেরই প্রেমের সূচনা এই বইমেলা। পুরো শহর যেন ভেঙে পড়তো পহেলা ফাল্গুন,ভালবাসা দিবস আর একুশ তারিখে। তিলধারণের জায়গা নাই।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgWUDryRULkZB8o-zwXgVoy3tZ3aBXJrYpwdKsJL3R7n8J4X7kNbFhIoUlf49bkhQTfmROnJj9BKZ_9IXsN3wrNHf8I6WU14MUrjVNrG3p46smfhlu4Qw31jyN0TfZYDUUkKzGLv6ihM2U0O-qrGtKrit1rae0Pd-yL7nu7EBqF4gcRUVpk-iguz3S4E4g/w602-h233/boi-mela-3-2024.jpg) |
অমর একুশে বইমেলা,২০২৪
|
সেই এক সময় ছিল! মেলা শুরু হতো টিএসসি থেকে। রাস্তার দু’পাশে সারি সারি বইয়ের ষ্টল। ডিভাইডারে বসেছে নানা শ্রেনীর হকার। ফুটপাতে বসেছে নীলক্ষেতের খুচরা বই বিক্রতারা । ভারতীয় লেখকদের নকল প্রিন্টের বই বিক্রি হচেছ দেদারসে। ‘ দ্যাইখ্যা লন-বাইচছ্যা লন-বিশ টাকা,বিশ টাকা’-বলে হকাররা বিক্রি করছে নানা তৈজস সামগ্রী। ফুটপাতের এক কোনায় বসেছে ইয়া মস্ত বড়ো বড়ো চিংড়ি মাছের মাথার ফ্রাই। এটা যারা খান নাই,তারা বুঝবেন না এর কি স্বাদ! কতদিন শুধু এই ফ্রাই খাওয়ার জন্যই চলে গিয়েছি একা একা। আজকের বার্গার,চিকেন ফ্রাই এর কাছে নস্যি।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhG5HioweOom7E6ux70aJQ8Q_XwixeDo3-Pmu2mxZKp3oByvCX6Z0r5LLin3LZQ3zOtPvmPrz3xCW4VORTDXuuJKMfsNN3AFJWuOau5U6U1rcd5DHFhMobSiIAFs1jR8Or7N45GmEYHem93QVLXq3-3GnQIroqhUJUULnHmZ_LoVM_lKPbXsXehTljICuk/w428-h295/latest%20pic%20040.jpg) |
মেলার বাইরে ফুটপাতে ভারতীয় লেখকদের বই। ২০১০
|
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiDRYNvjjuhge43QqSriT_cAhkIdLTcSWVYjtUIToVHWhgN1CSzMc5EXP1zgD9GeUMbTFSNoWAhyphenhyphenMUWu0XQcvPfiWSwOKbpg3zWAaJN42j-AOTo3fNC11f2NQ1zU4FFko_AE506szjJaIHbHPQlXg9kv64VIQYItpob7QZqNffq-EUwRIQJU83tQd02W9U/w440-h267/latest%20pic%20053.jpg) |
ফুটপাতে হকারদের পণ্যসম্ভার
|
দিলকুশা: নবাব স্যার সলিমুল্লাহ’র ভগ্নিপতি নবাব আজিম মিয়া মতিঝিলের সাধারণ বীমা ভবনের স্থানে একটি মনোহারী কুঠি নির্মাণ করে এর নাম দিয়েছিলেন দিলকুশা। কুঠিবাড়ির ভেতরে ছিল সুদৃশ্য পুকুর। পুকুরে ছিল কুমির। প্রতিদিন ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দিলকুশা ভবন দর্শনে আসত পর্যটকরা। সাতচল্লিশের দেশবিভাগের সময় সর্বপ্রথম অবহেলার স্বীকার হয় এই ভবন। দিলকুশা ভবন ধ্বংস করে দিয়ে পুকুর ভরাট করে ফেলা হয়। কুঠিবাড়ির একটি প্রাচীন মসজিদ আর নবাব পরিবারের কয়েকটি কবর ছাড়া আজ আর কোথাও দিলকুশার চিহ্নমাত্র নেই।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjqlKFTKaMj5gfqiji-Hi4JD5BGHeNBltdXS2tC625QSI4TRAhIohMfu6Nqbw23RaCdD5NLmgvElL_z6iOvuyflJpI_jGTwnPK37YqlZYZISmsRYDkGIJ6z5XKJbncGhWMV7z_JU8u2FCxCf6T_QIJiztFpZURLQUcGk7Gl2Y3bQsnTvkpcXN-CvQVa7Ws/w413-h273/dilkusha.jpg) |
১৯০৪ সালে Fritz Kapp এর তোলা দিলকুশা গার্ডেনসহ দিলকুশা প্রাসাদের ছবি। | | | | | | |
দোলাইগঞ্জ: প্রাক-মুঘল যুগে ঢাকা এখনকার মতো সমতল ছিল না। নানা জায়গায় নালা, ডোবা ও ঝিলের মতো ছিল। এসব জায়গায় বর্ষার পানি কমলে মশা-মাছি ও পোকা মাকড়ের উপদ্রব বেড়ে যেত। ফলে তখনকার ঢাকায় কলেরা-বসন্ত, ডায়েরিয়া লেগেই থাকতো। পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নয়নে ইসলাম খাঁ বুড়িগঙ্গা থেকে একটি কৃত্রিম খাল খনন করান। খালটি ঔপনিবেশিক আমলে ১৮৬৪ এবং ১৮৬৫ সালে ২৫ হাজার টাকা ব্যয়ে সংস্কার করা হয়। ১৯৬৭ পর্যন্ত দোলাই খাল ছিল বেশ বড় খাল। দোলাই খালের নামানুসারে একটি এলাকায় খালের পূর্বপাড়ে যেখানে নানারকম জিনিসপত্র বেচাকেনা হতো তা ‘দোলাইগঞ্জ’ নামে পরিচিতি লাভ করে।
ধ
ধোলাই
খাল: ঢাকা শহরের বাণিজ্যিক ও ব্যস্ততম খাল ছিলো এটি, যার সরাসরি
বুড়িগঙ্গা হয়ে বিশ্বের যোগাযোগ ছিল। খালের দুধারে ছিলো কাঠের আসবাবপত্রের
দোকান এবং ধোপাঘর। কাঠের সামগ্রী আর ধোপারা কাপড় ধুতো সেখানে। সে থেকেই
“ধোলাই খাল”।
ন
নীলক্ষেত:
ব্রিটিশরা এদেশে আসার পর থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে নীলচাষ শুরু করে।
সেসময় ঢাকার বর্তমান নীলক্ষেতের বিশাল এলাকাজুড়ে নীলের চাষ হতো। তখন থেকে
লোকমুখে এলাকাটি নীলক্ষেত নামেই পরিচিতি পায়।
প
পানিটোলা:
যারা টিন-ফয়েল তৈরি করতেন তাদের বলা হত পান্নিঅলা। পান্নিঅলারা যে এলাকায়
বাস করতেন তাকে বলা হতো পান্নিটোলা। পান্নিটোলা থেকে পানিটোলা।
পরীবাগ:
পরীবানু নামে নবাব আহসানউল্লাহর এক মেয়ে ছিল। নবাব আহসানউল্লাহর পুত্র
নবাব সলিমুল্লাহর ছিলেন পরীবানুর সৎ ভাই। নবাব সলিমুল্লাহ এই এলাকায় তার
সৎ বোনের জন্য একটি বাগানবাড়ি তৈরি করেন। কিছু সূত্র এই বাগানবাড়িটি নবাব
আহসানউল্লাহ কর্তৃক নির্মিত বলে দাবি করে। যাহোক, ওই বাগানবাড়িতে পরীবানু
থাকতেন বলে তার নামানুসারে ওই এলাকার নামকরণ হয় পরীবাগ।
পাগলাপুল:
ঢাকা থেকে প্রায় ৫ মাইল পূর্বে নারায়ণগঞ্জ রাস্তায় পাগলা নামে একটি নদী
ছিল। নদীর উপর মীর জুমলা ১৬৬২ সালে একটি সেতু নির্মাণ করেন; যা পাগলার পুল
নামে পরিচিত। সে থেকেই স্থানের নাম হয় পাগলাপুল। সেতুটির চার কোনায় চারটি
টাওয়ারের উপরে গম্বুজ ছিল। প্রহরীরা এসব টাওয়ারে অবস্থান করত। মিনারের মত
কয়েকটি পিলারের ধ্বংসাবশেষ এখনও আছে।
ফ
ফার্মগেট:
ব্রিটিশ সরকার কৃষি উন্নয়ন, কৃষি ও পশুপালন গবেষণার নিমিত্তে একটি ফার্ম
বা খামার নির্মাণ করেছিল এই এলাকায়। সেই ফার্মের গেট বা প্রধান ফটকের
নামানুসারেই গোটা এলাকার নাম হয়ে যায় ফার্মগেট।
ফুলবাড়িয়া
রেলস্টেশন: মুঘলদের পছন্দের তালিকায় ছিল সুগন্ধি ও বাহারি আতর। ঢাকায়
সুগন্ধি ও আতর তৈরির জন্য এখানে প্রচুর ফুলের চাষ শুরু হয়। ফুল উৎপাদনের
কারণেই এলাকার নাম হয় ‘ফুলবাড়িয়া’। এরপর ঢাকার প্রথম রেলস্টেশন এখানেই
নির্মিত হয়। ব্রিটিশ সরকার ১৮৮৫ সালে এখানে ৫০ একর এর বেশি জমিতে রেললাইন
স্থাপন শুরু করে। সেবছরই ময়মনসিংহ-ঢাকা- নারায়ণগঞ্জ ১৪৪ কিমি দীর্ঘ
মিটারগেজ রেল লাইন স্থাপন করা হয়। ১৯৬৮ সালে কমলাপুর রেলস্টেশন চালু হওয়ার
আগ পর্যন্ত রেলস্টেশন বলতে সবাই ফুলবাড়িয়াকেই চিনতো
ফরাশগঞ্জ:
বুড়িগঙ্গা নদীর উত্তর তীরে গড়ে উঠেছে ফরাসি বণিকদের স্মৃতিবিজড়িত এই
এলাকা। ১৭৮০ সালে ঢাকার তৎকালীন নিমতলী কুঠির নায়েবে নাজিম নওয়াজিশ
মোহাম্মদ খানের অনুমতি নিয়ে ফরাসি বণিকরা এখানে একটি গঞ্জ/বাজার প্রতিষ্ঠা
করে। সেখানে ছিল কাঁচা হলুদ, আদা, রসুন ও মরিচের পাইকারি আড়ৎ। শুরুতে এর
নাম ছিল ফ্রেন্সগঞ্জ। কিন্তু সাধারণ মানুষের মুখে ফ্রেন্সগঞ্জ হয়ে উঠেছিল
ফরাসিগঞ্জ। কালক্রমে সেই ফরাসিগঞ্জের বর্তমান রূপ ফরাশগঞ্জ।
ব
বিজয়নগর:
পুরানা পল্টন চৌরাস্তা থেকে যে রাস্তাটি কাকরাইলের দিকে গেছে তার মাঝামাঝি
অংশে একটি পানির ট্যাঙ্ক রয়েছে। এই এলাকাটি ‘বিজয়নগর’ নামে পরিচিত।
বিজয়নগরের নামকরণ করা হয়েছে বিজয় থেকে। কিন্তু এখানে কোনো যুদ্ধ হয়েছিল
কিনা তা জানা যায়নি। অন্য মতে, বিজয় বাবু নামে কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তি এই
মহল্লা প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর নামানুসারেই হয়তো বিজয়নগরের নামকরণ করা হয়েছে।
বেগমবাজার:
এই এলাকার নামকরণে সবচেয়ে জনপ্রিয় ইতিহাস হল, ১৯৩৯-১৯৪০ সালে সরফরাজ খান
ঢাকার নায়েব-এ-নাজিম ছিলেন। তার মেয়ে ছিল লাডলি বেগম। অনেকের মতে তার নামেই
এই এলাকার নামকরণ হয়। বেগমবাজার মসজিদের কাছাকাছি অবস্থিত বাজারটিও তার
মালিকানাধীন ছিল। বাজারটি ১৯৭৭ সালে অগ্নিদগ্ধ হয়। অতঃপর কিছু বর্ধিত ভাতার
বিনিময়ে সরকার লাডলি বেগমের কন্যা পুন্নী বেগম ও হাজি বেগম থেকে এর
মালিকানা গ্রহণ করেন।
বংশাল:
বিভিন্ন নৌযানকে মেরামতের জন্য নৌবন্দরের যে বিশেষ তীরে নোঙর করা হয়,
ব্রিটিশ আমলে সেটির নাম ছিল ব্যাঙ্কশাল। ঢাকার ধোলাইখাল যখন বুড়িগঙ্গার
সাথে যুক্ত ছিল, ইংরেজরা সেখানে গড়ে তুলেছিল একটি ব্যাঙ্কশাল। মেরামতের
জন্য নৌযান খাল দিয়েই আনা নেয়া করা হতো। স্থানীয়রা ব্যাঙ্কশালের বাংলা
সংস্করণ হিসেবে বংশাল শব্দটির প্রচলন ঘটিয়েছে।
ভ
ভূতের
গলি: পূর্বে এখানে এক ইংরেজ সাহেব বাস করতেন। নাম তার মিস্টার বুথ/বুট। ওই
এলাকায় তিনিই ছিলেন প্রথম কোনো ইংরেজ সাহেব। তাই তার নামানুসারে জায়গাটির
নাম হয়েছিল Boot’s Lane (বুট সাহেবের গলি)। কিন্তু কালানুক্রমে তা বুটের
গলি, বুথের গলি এবং সর্বশেষ ভূতের গলি নামে পরিচিত হয়।
ম
মালিবাগ:
ঢাকা একসময় ছিল বাগানে ভরপুর। বাগানের মালিদের ছিল দারুণ কদর। বাড়িতে
বাড়িতে বাগান ছিল, বিত্তশালীরাও সৌন্দর্য পিপাসু হয়ে বিশাল সব ফুলের বাগান
করতেন। ঢাকার বিভিন্ন জায়গার নামের শেষে ‘বাগ’ শব্দ সেই চিহ্ন বহন করে। সে
সময় মালিরা তাদের পরিবার নিয়ে যে এলাকায় বাস করতেন সেটাই আজ মালিবাগ।
মতিঝিল:
মুঘল আমল থেকেই একটি প্রসিদ্ধ এলাকা হিসেবে এর পরিচিতি। মতিঝিল একসময়
মীর্জা মোহাম্মদের মহলের জন্য সুপরিচিত ছিলো। মহলের মধ্যে ছিলো একটি পুকুর।
যা“মোতির ঝিল” নামে পরিচিত। এই ঝিলটির জন্যই এলাকাটিকে মতিঝিল নামকরণ করা
হয়।
মগবাজার:
সবচেয়ে প্রচলিত তত্ত্ব হলো, মগ তথা বর্মী বংশোদ্ভূত ব্যক্তিদের থেকে এসেছে
এলাকার নাম। ১৬২০ সালে মগরা তৎকালীন মুঘল সুবা বাংলার কেন্দ্রস্থল ঢাকায়
আক্রমণ চালালে সুবাদার ইসলাম খান মগদের তখনকার ঘাঁটি চট্টগ্রাম জয় করেন।
সেখানকার মগ শাসক মুকুট রায় ও তার অনুসারীরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে, ইসলাম
খান তাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ঢাকার একটি এলাকায় থাকার অনুমতি
দেন যা আজ মগবাজার নামে পরিচিত।
মানিকনগর:যাত্রাবাড়ি ও সবুজবাগ থানার অন্তর্গত একটি জনবহুল এলাকার নাম মানিকনগর। এলাকাটি একসময় ‘ছনটেক’ নামে পরিচিত ছিল। কারণ এই এলাকায় তখন অনেক ছন উৎপন্ন হতো। তবে ছন বাদেও এখানে একসময় প্রচুর পরিমাণে বাঁধাকপি উৎপন্ন হতো। এমন কথা প্রচলিত আছে যে, এই ছনটেক এলাকার অধিবাসীরা বাঁধাকপি বিক্রি করে প্রচুর টাকা-পয়সা আয় করতো বলে আশেপাশের এলাকার লোকেরা মনে করতো তারা মানিক পেয়েছে। কালে কালে তা থেকেই নাকি ‘মানিকনগর’।