শিশুশ্রম ও কিছু ভাবনা

কুয়াশঢাকা ভোর।  সবাই যখন শীতের সকালে লেপের আদরে সুখনিদ্রায় বিভোর, তখন আমি  ‘স্বাস্থ্য সকল সুখের মুল’ নামক বাণীটি জপতে জপতে বোটানিক্যাল গার্ডেনে ঢুকি ইষ্টার্ণ হাউজিং-শেষ প্রান্ত দিয়ে।  চারিদিকে কুয়াশা, দুই হাত দুরের জিনিসও দেখা যায় না । গাছ-পালার প্রায় ঝাপসা অবয়ব শুধু বোঝা যায় । হাঁটতে থাকি লাল ইট বিছানো ট্রেক দিয়ে। হাঁটতে বেশ লাগছে। কিন্তুু ঠান্ডা বাতাস মনে হয় আর কোন ফাঁক-ফোঁকর না পেয়ে আমার নাক দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করছে। হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম গোলাপ বাগানের দিকে । অজস্র গোলাপ ফুটে আছে চারিদিকে ..  পাঠক নিশ্চয় বিরক্ত হচ্ছেন ! কিসের মধ্যে কি পান্তা ভাতে ঘি ! হেডিং আর সাবজেক্টের মধ্যে মিল না দেখে । আসলে আমি একটু প্রকৃতি প্রেমিক বলে প্রকৃতির বর্ণনা দেওয়ার লোভটা সংবরণ করতে পারলাম না ।



 গোলাপ বাগান থেকে একটি পিচঢালা রাস্তা চলে গেছে চিড়িয়াখানার দিকে। সেদিকে হাঁটতে থাকি এবং একসময় নিজেকে আবিষ্কার করি গেটের বাইরে। কি আর করা ... চেপে বসি বাসায় ফেরার জন্য। রাস্তায় লোকজনের আনাগোনা কম। এতক্ষনে কুয়াশার চাদর ভেদ করে সুয্যিমামা উঁকি দিয়েছে। শিয়ালবাড়ীর মোড়ে এসে চোখ আটকে গেল একটি দৃশ্য দেখে ।  কিছুতেই চোখ ফেরাতে পারছিলাম না। মনের মধ্যে একটি সকরুণ রস বয়ে গেল ।  হাফ প্যান্ট পরা একটি ছোট ছেলে । পানির ফিল্টারের জার ভর্তি একটা ভ্যান ঠেলছে । বয়স আর কত হবে- নয় কি দশ। খালি পা । মায়াবী ফুটফুটে চেহারা । অতিকষ্টে ঠেলছে ভ্যানটি । ধারনা করলাম, ভ্যানটির চালক হযতো ছেলেটির বাবা। আবার নাও হতে পারে। হয়তো তার বাবা এই বয়সেই ছেলেটিকে কাজে লাগিয়ে দিয়েছে কিছুটা বাড়তি রোজগারের আশায় । আবার হয়তো ছেলেটি নিজেই কাজ জোগাড় করেছে গরীব বাবা মাকে সাহায্য করার জন্য। মনের মধ্যে বিচিত্র অনুভুতি খেলা করছে। অভ্যাসবশত: মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুললাম। ছবি তুলে মনটা আরোও খারাপ হয়ে গেল। নিজেকেই প্রশ্ন করলাম-এই ছবি তোলার কি দরকার ছিল ?  হয়তো, এই ছবি দেখে বন্ধু-বান্ধবরা বাহবা দিবে,ফেইস-বুকে দিলে বাড়তি কিছু লাইক পাওয়া যাবে। হয়তো কিছু এনজিও কিংবা ফটো এজেন্সি কিনে নিতেও পারে। কিন্তু আসলে কি কোন লাভ হবে? এটাতো বাংলাদেশের নেগেটিভ ইমেজ। অবশ্য বাংলাদেশের অনেক ফটোগ্রাফার আছে যারা বাংলাদেশের নেগেটিভ ইমেজ বর্হিবিশ্বে তুলে ধরার জন্য সদা তৎপর । হয়তো কিছু বাড়তি ডলারও আসছে পকেটে । আর প্রদশর্নীর উদ্দেশ্যে একটু আরেকটু বিদেশ ঘোরাঘুরিও করেন তারা। হয়তো বিদেশীদের পিঠ-চাপড়ানীতে গর্বে ফুলে উঠে তাদের বুক।  কিন্তুু সেই ছেলেটি কথা কি তাদের মনে থাকে? যার জন্য তিনি আজ এত্তোবড় ফটোগ্রাফার! যার যন্ত্রণাকিষ্ট মুখের ছবি তুলে আপনি বাহ¦বা পাচ্ছেন, তার ভাগ্য উন্নয়ণে আপনার ভুমিকা আছে কি?



আমাদের দেশের নেগেটিভ দিক ছাড়াও তো অনেক পজিটিভ দিক আছে ্ যা নিয়ে আমরা সত্যিই গর্ব করতে পারি। আমরা আজ আর তলা বিহীন ঝুঁড়ি নই। ত্রিকেটে, তথ্যপ্রযুক্তি প্রায় সবক্ষেত্রেই আমরা এগিয়ে গেছি এবং এগিয়ে যাব। তাই আসুন পজিটিভ বাংলাদেশের চিত্র তুলে ধরি, আর তা নাহলে তো নিজের সাথেই প্রতারনা করা হবে।






1 Response to "শিশুশ্রম ও কিছু ভাবনা "

  1. minhazleo says:

    wow http://www.dhakatimes24.com/

Post a Comment