যাপিত জীবন: মৎস্যকথন

অনেক আগে টিভিতে একটি বিজ্ঞাপন দেখেছিলাম। বিজ্ঞাপনের গানটি এরকম-
‘মৎস্য মারিব,খাইবো সুখে।
কি আনন্দ! লাগছে বুকে।
ও মৎস্য মাররে...। ’

মাছের কথা উঠলে বাঙালীর চিত্ত প্রফুল্ল হয়। বকবক করার মুড আসে। কে কবে বড় মাছ কিনেছিল-ইনিয়ে বিনিয়ে তার বয়ান চলে। আমরা নাকি মাছে ভাতে বাঙালী । এখন বাঙালীও আছে, ভাতও আছে-কিন্তু, মাছ নেই। মাছের দাম বড্ড চড়া। বড় মাছ পাতে তোলার জো নেই। নদী-পুকুরেও আগের মতো মাছ পাওয় যায় না। সামান্য কাঁচকি মাছ-তাও আবার তিন’শ টাকা কেজি।  বাজারে মাছ মাংসের দাম বাড়লে নাকি ডিমের চাহিদা বাড়ে। মাছ আমিষের বড় উৎস । কিন্তুু মাছ কই? আমিষের চাহিদা তো মেটাতে হবে! তাই বেচারা ডিমের উপর এত জুলুম। আমরা এখন ‘ডিমে-ভাতে বাঙালী’। মাছ নাই নাই বললে কি হবে। বাজারে মাছের জোগান তো কম নয়। মাছ আছে বাজারে ,সুপার শপে, পাড়া-মহল্লার আনাচে কানাচে । কিন্তুু, সাধারণের নাগালের বাইরে।



মাছের বাজারে আগুন। সেই আগুন নিভানোর সাধ্য বাঙালীর নেই। তবুও মৎস্যপ্রীতি বাঙালীর কমে নাই। বড় মাছ কেনার সাধ্য নাই,কিন্তুু দেখে তো চিত্তে একধরনের পুলক অনুভুত হয়। নদী-পুকুরে মাছ না থাকলেও বাজারে তো মাছের কমতি নেই। কিন্তুু, হাজার তিনেক টাকার মাছ কিনলেও তো বাজারের ব্যাগের অর্ধেকও ভরে না। চাপা দীর্ঘ শ্বাস রয়ে যায়। বয়স্ক ব্যক্তিরা পুরানো দিনের স্মৃতি হাতরান। আহা! কি যে দিন ছিল! চার-পাঁচ পদের মাছ পাতে না পড়লে খাওয়ার তৃপ্তিই হতো না। কি তাদের ¯^াদ! লা জবাব। খেয়েও সুখ ছিল,অন্যকে খাইয়েও সুখ ছিল। এখন মাছের দাম চড়া, কিন্তুু সেই ¯^াদ নেই। তাই তৃপ্তির ঢেঁকুর উঠে না।

বেশী দিন আগের কথা নয়। বড় মাছ কেনা ছিল রীতিমত ফ্যাশন। কার ট্যাঁক কত বড়, কে ভাল কামাচ্ছেন তা বোঝা যেত মাছ কেনা দেখে। পাড়ার কোন সচ্ছল ব্যক্তি যখন পাঁচ-সাত কেজি ওজনের বোয়াল কিনে সগর্বে বুক ফুলিয়ে বাড়ির পথ ধরতেন, তখন তা দেখার মতো ব্যাপার ছিল বৈকি। পদে পদে মাছের দাম বলতে হতো (অনেকটা কুরবানী হাট থেকে গরু কিনে ফেরবার সময়, যে রকম হয়)। ছোটবেলায় দেখেছি অনেকের বাসায়  অতিথি আসতো বড় মাছ হাতে ঝুলিয়ে। ব্যাগের কোন বালাই ছিল না। মুখের কোনে ঝুলে থাকতো একটুকরো হাসি। গৃহর্কতা মনে মনে বেজায় খুশি। মুখে বলত “কি দরকার ছিল,এত ঝামেলা করার ?”। মাছের আকারভেদে সমাদরেরও হেরফের হতো। আত্মীয় বাড়ি যেতে হতো হাতে বড় মাছ দুলিয়ে দুলিয়ে। পাড়া-পড়শী উঁকি-ঝঁকি মারতো । অফিসে পদোন্নতি পেতে হলে বড় সাহেবের বাসায় পেল্লায় সাইজের একটি বোয়াল বা নদীর পাংগাস নিয়ে গেলেই কেল্লা ফতে। প্রমোশন আর ঠেকায় কে ? নদীর পাংগাশ তো একসময় ছিল রীতিমতো ক্রেজ। এখন বাজারে নদীর পাংগাশ খুঁজলে,লোকে আপনাকে পাগল ঠাওরাবে। বয়স্ক লোকেরা এখনও মাঝে মাঝে খোঁজ করেন নদীর পাংগাসের। পাংগাস মাছের তেলে ভরা পেটি-আহা! কি তার টেষ্ট! মাছের তেল হাত চুঁয়ে চুয়েঁ পড়ে। নদী এখনও আছে, পাংগাশ নেই। এক্কেবারে হাপিস। কালেভাদ্রে হয়তো দু-একটা ধরা পড়ে আর তাই নিয়ে কি কাড়াকাড়ি। এখন যাা আছে-তা হলো থাই পাংগাশ। বিশ্রী গন্ধ! কেউ কিনতে দেখলে প্রেষ্টিজ পাংচার।


একটা সময় ছিল বাড়িতে নতুন বউ আসলে, মাছ কাটতে হতো। স্কীল পরীক্ষা। বউ কেমন সংসারী হবে তা নাকি নতুন বউয়ের মাছ কাটা দেখে বোঝা যেত। নতুন বউ যখন মাছ কাটতে বসেছে,তখন ছোট ছেলে মেয়েরা সুর তুলতো

‘রাঙা বউ মাছ কুটেরে, উঠানে বসিয়া ।
রঙ-বেরঙের মাছ কুটে বটিতে ফেলিয়া
বউ পান মুখে দিয়া’।

আজকাল রাঙা বউ কেন, কেউই মাছ কাটতে চায় না । বাজারে একটু পয়সা দিলেই তো মাছ কেটে দেয়। এত্ত ঝামেলা কে পোহাবে বাপু? হাতের ত্বক তো ঠিক রাখতে হবে। তাছাড়া ম্যানিকিউ-এর যা খরচ। বাসার বুয়ারাও মাছ কাটতে কাটতে গজগজ করে।

মাছ কেনার মধ্যে একটা আনন্দ আছে। আছে বেদনাও । মাছ কেনা একটা নেশাও। মধ্যবিত্তের জন্য এই নেশা বড্ড সর্বনাশী। মুহুর্তে পকেট খালি হয়ে যায়। সারা মাস ধার দেনায় চলতে হয়। কম পয়সায় বড় মাছ কিনতে পারলে তো নিজেকে একদিনের রাজা মনে হয়। পকেট তখন গড়ের মাঠ। তখন শুধু চোখে দেখে আর দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া উপায় থাকে না।

মাছের বাজারে ক্রেতা তিনরকম। মানুষের সমাজের শ্রেণীভেদের মতোই। উচ্চবিত্ত,মধ্যবিত্ত আর নি¤œবিত্ত। উচ্চবিত্তরা গাড়ি হাঁকিয়ে বাজাওে যান। দরদামের বালাই নেই। ব্যাগ ভর্তি মাছ কেনা চাই। মাছের রেন্জও বড়। পাবদা,রুই,ইলিশ,কাতল,শিং, বাইম আর রুপচাঁদা ছাড়া বড়লোকদেও উদরপূতি হয় না। ছোট মাছ-সেতো খাবে গরীবেরা । মধ্যবিত্তরা মাছ কিনে দরদাম করে। প্রচুর বাক্য বিনিময় হয় ত্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে। আপোষে আসতে সময় নেয়। একটু বড় মাছ কিনলেই যে ট্যাঁকে টান পড়ে। বাজেট কাঁটছাট করতে হয়। চাষের কই,থাই পাংগাশ,তেলাপিয়া, নিদেনপক্ষে মাঝারী সাইজের চাষের রুই-কাতলা-মধ্যবিত্তের রে›েজর মধ্যে। ইলিশ মাছ তো ‘ তুমি কোন গগনের তারা’।

 বিত্তরা মাছ খাওয়া ভুলেই গেছে। তেলাপিয়া,থাই পাংগাস ও চাষের কই কালে ভাদ্রে খাওয়া হয়। কেজি তো দুরে থাক একপোয়া মাছ অথবা এক’শ গ্রাম মাছ কিনতেও নাভিশ্বাস উঠে। সাহস কওে একটু বড় মাছ কিনে ফেললে খেতে হয় বউয়ের মুখ ঝাপটা।

ইলিশ তো মাছের রাজা। বাতির রাজা যেমন ফিলিপ্স, মাছের রাজা তেমনি ইলিশ। বাঙালীর গর্ব। সেই গর্বও প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। কয়জনের পাতে আজকাল ইলিশ উঠে। অথচ একসময় এলাকার প্রায় বাড়ীতে দুপুরবেলায় ভেসে আসত ইলিশভাজার মন আনচান করা সুবাস। সত্যিই সেলুকাস-কি বিচিত্র এই দেশ-বড় ইলিশ এখন বাঙালীর নাগালের বাইরে। বাঙালী এখন টেনেটুনে হাফ কেজি থেকে বড়জোর এক কেজি ওজনের ইলিশমাছ কিনতে পারলেই খুশিতে বাকবাকুম। বড় দুই-তিন কেজি ইলিশ তো আউট অব রে›জ। ভড়িওয়ালা পয়সাওয়ালাদের পাতেই মানায়। পহেলা বৈশাখে ইলিশ নিয়ে বাক্সালীর মাতম নতুন কিছু নয়। যেকোন মূল্যে ইলিশ চাই। পান্তা ভাতের সাথে ইলিশ ভাজা-থালার এক কোনায় শুটকি বা আলু ভর্তা-হয়ে গেলাম ষোল আনা বাঙালী!

বছরের কয়েক মাস মা-ইলিশ ধরা উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করে সরকার। এই উদ্যেগ নিশ্চয় প্রশংসার দাবীদার। এই সময় মা-ইলিশ ডিম পাড়তে গভীর সাগরে নোনা পানি থেকে নদীর মিঠা পানিতে ঢুকে পড়ে । টিভির সংবাদে দেখা যায় মনকে মন মাছ সিজ করছে আইন প্রয়োগকারী সং¯হা । জেলেরা পেটের দায়ে অবৈধভাবে ইলিশ ধরছে। সিজ করা এত মাছ যায় কই? নিশ্চয় উনাদের পেটে।  আমাদের পাতে এসে পড়ে অবৈধ ভাবে ধরা ইলিশের ছিঁটেফোটা ।

মাছ কেনা একটা আর্ট। সবাই টাট্কা মাছ কিনতে পারে না। এই গুন রপ্ত করতে হয়। জিওল মাছের কথা বাদ দিলাম। জিওল মাছ কেনার মধ্যে কোন আর্ট নেই। কেউ সেধে আপনাকে এই আর্ট শেখাবে না। এরজন্য আপনাকে কাঠ-খড় পুড়াতে হবে। দিনের পর দিন বাজারে যেতে হবে। মাছ ঘাটতে হবে। হাতে কলমে শিখতে হবে।মাছের গায়ের পানি গায়ে এসে পড়বে।বিরক্তি লাগবে। ভোদাইমার্কা চেহারা নিয়ে বাজারে গেলে মাছ বিক্রেতা আপনাকে পেয়ে বসবে। ধনীর দুলাল দেখলে মাছ বিক্রেতা বুঝে যায়, এই বেটা শখ করে বাজারে এসেছে। পঁচা-ধচা বাসী মাছ গচিয়ে দেবে। মাছ বিক্রেতা বা বয়স্ক কাউকে অনুরোধ করলেও আপনাকে মাছ চেনার সহজ তরিকা বাতলে দেবে না। চোখ রাঙাবে। ভাব করবে এমন যে, বাপু! ঠকে শিখ।বাপের হোটেলে যারা তিনবেলা ফ্রি খান আর মাছের বাজারের চৈহদ্দি পাড়ান না, তাদের জন্য এই বিদ্যে নয়। এই বিদ্যা অর্জন করতে হয় সাধনার দ্বারা । ধনীর দুলালেরা এখানে অপাংতেয়। পুরুষ মানুষের চেয়ে নারীরা নাকি মাছ ভাল কিনতে পারে।শোনা কথা নয়।নিজের চোখে দেখা। চাক্ষুষ অভিজ্ঞতা প্রচুর। যেসব মহিলা বাজার করেন,তাদের স্বামীদের আমার হিংসা হয়। এই স্বামীরা কত আনন্দে থাকে। নো কাঁদা, নো টিপাটিপি,নো মুলামুলি, ওনলি মাছ ভাজা। আহা! কি আনন্দ আকাশে বাতাসে। মহিলারা মাছ খুব টিপেটুপে দেখেন। নাকের কাছে মাছ ধরে অনেকে ফুলের ফুলের গন্ধ নেওয়ার মতো শুঁকেন। ফুলকার ভিতর আঙ্গুল চালিয়ে দেন র্নিদ্বিধায়। কটমট করে তাকান বিক্রেতার দিকে। এই চোখ রাঙানীতে শিবও ভস্ম হয়ে যায়,মাছওয়ালা সেতো নিছক গো-বেচারা। মাছের ঝাপি থেকে তুলে আনেন মণিমুক্তো। ইলিশ মাছ কিনতে হলে পেটের দিকে টিপতে হবে। পেট ফোলা মানেই পেটে ডিম আছে। এই ডিমওয়ালা ইলিশের টেষ্ট কম। তাই সবার চোখ ডিম পাড়ার পরেও এই ইলিশের স্বাদ
পাওয়া যায় না । কিনতে হবে ভার্জিন ইলিশ। তেলে পরিপূর্ণ। অপূর্ব স্বাদ। ভাজার গন্ধে ত্রিভুবন মাতোয়ারা।

কলকাতায় একবার মাছের বাজারে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। কিনতে নয়,দেখতে। কি বিশাল মাছের বাজার। তাকিয়ে দেখলেও সুখ।বাজারের একপাশে বিশাল আকারের দাউ-বটি নিয়ে বসে আছে কিছুলোক। বড় সাইজের মাছ মুহুর্তে কেঁটে কুঁটে ব্যাগে ভরে দিচ্ছে। জ্যান্ত মাছ ধড়-ফড়িয়ে জীবনত্যাগ করছে। মাছ কাটুনীদের চোখে জান্তব উল্লাস।ক্রেতার চোখে আসন্ন ভোজের তৃপ্তিকর ছবি ভাসছে। মনে আছে এক মাছওয়ালা দাদার সাথে আলাপ জমিয়ে ছিলাম। ওপার বাঙলা থেকে এসেছি বলে বেশ খাতির করেছিল। কথায় কথায় জিজ্ঞেস করেছিলাম ‘দাদা, টাটকা মাছ চিনবো কি করে?’। দাদা আমার দিকে অর্ধবোজা লাল চোখে তাকিয়ে যে টোটকা দিয়েছিলেন, তা অমূল্য। সযতেœ রেখে দিয়েছিলাম মস্তিকের কোষ-গহŸরে। এই অবসরে তা মৎস খাদকদের জন্য দুটি টিপ্স না দিয়ে পারলাম না । (১) আঁশ ওয়ালা টাটকা মাছের আঁশে আঠালো ভাব থাকবে। পঁচা বা প্রায় পঁচতে বসা মাছের আঁশ থাকবে শুকনো।  (২) চিংড়ী মাছের ঠিক মাঝখানে ধরে তুলুন, যদি ঘাড় সহ মাথা নিচের দিকে হেলে পড়ে তবে তা নরম অথাৎ প্রায় পঁচতে বসা। কলকাতায় এসে জীবনে প্রথম তপসে মাছ দেখলাম। প্রচুর চাহিদা। দাদারা কিনছেনও প্রচুর। এই মাছের জন্য কলকাতার দাদারা ছিল পাগল। ছাঁকা তেলে ভাজা মাছের কাছে ছিল সবকিছুই তুচ্ছ।  পাঠ্যবইয়ে তপসে মাছ সর্ম্পকে একটি অপূর্ব কবিতা পড়েছিলাম-নিচে সম্পূর্ণ কবিতাটি না দিলে নিশ্চয় অন্যায় হবে। কবিতাটির রচয়িতা ‘ভোরের পাখি’ খ্যাত ঈশ্বর চন্দ্র গুপ্ত।

                                      তপসে মাছ

                         কষিত-কনককান্তি কমনীয় কায়।
                         গালভরা গোঁফ-দাড়ি তপ¯^ীর প্রায়।।
                         মানুষের দৃশ্য নও বাস কর নীরে।
                         মোহন মনির প্রভা ননীর শরীরে।।
                         পাখি নও কিন্তু ধর মনোহর পাখা।
                         সুমধুর মিষ্ট রস-সর্বঅংগে মাখা।।
                         একবার রসনায় যে পেয়েসে তার।
                         আর কিছু মুখে নাহি ভাল লাগে তার।।
                         দৃশ্যমাত্র সর্বগাত্র প্রফুল্লিত হয়।
                         সৌরভে আমোদ করে ত্রিভুবনময়।।
                         প্রাণে নাহি দেরি সয় কাঁটা আঁশ বাছা।
                         ইচ্ছা করে একেবাওে গালে দেই কাঁচা।।
                         অপরূপ হেরে রূপ  পুত্রশোক হরে।
                         মুখে দেওয়া দুরে থাক গন্ধে পেট ভরে।।
                         কুড়ি দরে কিনে লই দেখে তাজা তাজা ।
                         টপাটপ খেয়ে ফেলি ছাঁকা তেলে ভাজা।।
                         না করে উদর যেই তোমায় গ্রহন।
                         বৃথায় জীবন তার বৃথায় জীবন।।
                         নগরের লোকসব এই কয়মাস।
                         তোমার কৃপায় করে মহা সুখে বাস।।

ঢাকার বাজারে এই তপসে মাছ দেখছি কয়েক বছর ধরে। কবির বর্ণনার পরে যদি আমি এই মাছের বর্ননা দেই,তাহলে তা হবে বেয়াদবীর সমান। ঢাকার বাজারে একে তপসী মাছও বলে। কিন্তুু, কি এক রহস্যের কারনে বাংলাদেশে এই মাছটি তেমন জনপ্রিয়তা পায়নি। পাঠক বিশ্বাস করুন, গভীরতেলে ভাজা এই মাছ কিন্তুু আসলেই অনবদ্য। ট্রাই করে দেখেন।

মাছ নিয়ে অনেক কচকচানী হলো। বেশী করে মাছ খান। মাছ বেশী খেলে হার্ট ভাল থাকবে আর হার্ট ভাল থাকলে বেশী করে ভালবাসতে পারবেন। মাছের আবাস¯হল জান দিয়ে হলেও রক্ষা করুন, নইলে আগামী বিশ বছরের পরে হয়তো পত্রিকার বিজ্ঞাপনে দেখা যাবে এই কথাটি ‘শেষ কবে মাছ খেয়েছেন’।

শুভ সালাতিন
০১/০৬/২০১৬
মিরপুর,ঢাকা





 

     




OLD PHOTOS ARCHIVE OF BANGLADESH

In a street of old Dhaka, Mukti Bahini guerrillas hunting Pakistani snipers during the liberation war of Bangladesh against Pakistan. Dhaka, Bangladesh (1971)
Photographer- Kishor Parekh






























Bangladeshi women during the liberation war of Bangladesh against Pakistan. Bangladesh (1971)
Photographer - Kishor Parekh
An Indian army personnel searching a suspected Pakistani Spy and peer into Lungi in search of weapons during the liberation war of Bangladesh against Pakistan. Bangladesh (1971) Photographer – Kishor Parekh

শিশুশ্রম ও কিছু ভাবনা

কুয়াশঢাকা ভোর।  সবাই যখন শীতের সকালে লেপের আদরে সুখনিদ্রায় বিভোর, তখন আমি  ‘স্বাস্থ্য সকল সুখের মুল’ নামক বাণীটি জপতে জপতে বোটানিক্যাল গার্ডেনে ঢুকি ইষ্টার্ণ হাউজিং-শেষ প্রান্ত দিয়ে।  চারিদিকে কুয়াশা, দুই হাত দুরের জিনিসও দেখা যায় না । গাছ-পালার প্রায় ঝাপসা অবয়ব শুধু বোঝা যায় । হাঁটতে থাকি লাল ইট বিছানো ট্রেক দিয়ে। হাঁটতে বেশ লাগছে। কিন্তুু ঠান্ডা বাতাস মনে হয় আর কোন ফাঁক-ফোঁকর না পেয়ে আমার নাক দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করছে। হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম গোলাপ বাগানের দিকে । অজস্র গোলাপ ফুটে আছে চারিদিকে ..  পাঠক নিশ্চয় বিরক্ত হচ্ছেন ! কিসের মধ্যে কি পান্তা ভাতে ঘি ! হেডিং আর সাবজেক্টের মধ্যে মিল না দেখে । আসলে আমি একটু প্রকৃতি প্রেমিক বলে প্রকৃতির বর্ণনা দেওয়ার লোভটা সংবরণ করতে পারলাম না ।



 গোলাপ বাগান থেকে একটি পিচঢালা রাস্তা চলে গেছে চিড়িয়াখানার দিকে। সেদিকে হাঁটতে থাকি এবং একসময় নিজেকে আবিষ্কার করি গেটের বাইরে। কি আর করা ... চেপে বসি বাসায় ফেরার জন্য। রাস্তায় লোকজনের আনাগোনা কম। এতক্ষনে কুয়াশার চাদর ভেদ করে সুয্যিমামা উঁকি দিয়েছে। শিয়ালবাড়ীর মোড়ে এসে চোখ আটকে গেল একটি দৃশ্য দেখে ।  কিছুতেই চোখ ফেরাতে পারছিলাম না। মনের মধ্যে একটি সকরুণ রস বয়ে গেল ।  হাফ প্যান্ট পরা একটি ছোট ছেলে । পানির ফিল্টারের জার ভর্তি একটা ভ্যান ঠেলছে । বয়স আর কত হবে- নয় কি দশ। খালি পা । মায়াবী ফুটফুটে চেহারা । অতিকষ্টে ঠেলছে ভ্যানটি । ধারনা করলাম, ভ্যানটির চালক হযতো ছেলেটির বাবা। আবার নাও হতে পারে। হয়তো তার বাবা এই বয়সেই ছেলেটিকে কাজে লাগিয়ে দিয়েছে কিছুটা বাড়তি রোজগারের আশায় । আবার হয়তো ছেলেটি নিজেই কাজ জোগাড় করেছে গরীব বাবা মাকে সাহায্য করার জন্য। মনের মধ্যে বিচিত্র অনুভুতি খেলা করছে। অভ্যাসবশত: মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুললাম। ছবি তুলে মনটা আরোও খারাপ হয়ে গেল। নিজেকেই প্রশ্ন করলাম-এই ছবি তোলার কি দরকার ছিল ?  হয়তো, এই ছবি দেখে বন্ধু-বান্ধবরা বাহবা দিবে,ফেইস-বুকে দিলে বাড়তি কিছু লাইক পাওয়া যাবে। হয়তো কিছু এনজিও কিংবা ফটো এজেন্সি কিনে নিতেও পারে। কিন্তু আসলে কি কোন লাভ হবে? এটাতো বাংলাদেশের নেগেটিভ ইমেজ। অবশ্য বাংলাদেশের অনেক ফটোগ্রাফার আছে যারা বাংলাদেশের নেগেটিভ ইমেজ বর্হিবিশ্বে তুলে ধরার জন্য সদা তৎপর । হয়তো কিছু বাড়তি ডলারও আসছে পকেটে । আর প্রদশর্নীর উদ্দেশ্যে একটু আরেকটু বিদেশ ঘোরাঘুরিও করেন তারা। হয়তো বিদেশীদের পিঠ-চাপড়ানীতে গর্বে ফুলে উঠে তাদের বুক।  কিন্তুু সেই ছেলেটি কথা কি তাদের মনে থাকে? যার জন্য তিনি আজ এত্তোবড় ফটোগ্রাফার! যার যন্ত্রণাকিষ্ট মুখের ছবি তুলে আপনি বাহ¦বা পাচ্ছেন, তার ভাগ্য উন্নয়ণে আপনার ভুমিকা আছে কি?



আমাদের দেশের নেগেটিভ দিক ছাড়াও তো অনেক পজিটিভ দিক আছে ্ যা নিয়ে আমরা সত্যিই গর্ব করতে পারি। আমরা আজ আর তলা বিহীন ঝুঁড়ি নই। ত্রিকেটে, তথ্যপ্রযুক্তি প্রায় সবক্ষেত্রেই আমরা এগিয়ে গেছি এবং এগিয়ে যাব। তাই আসুন পজিটিভ বাংলাদেশের চিত্র তুলে ধরি, আর তা নাহলে তো নিজের সাথেই প্রতারনা করা হবে।






ফটোসপ টিউটোরিয়াল : ৩৬০ ডিগ্রী প্যানোরামা

বন্ধুরা কেমন আছেন ? আজকে আমি আপনাদেরকে একটি মজার ফটোশপ টিউটোরিয়াল শেখাব। যারা নিয়মিত ফটোগ্রাফির খোঁজখবর রাখেন, তারা হয়তো বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ৩৬০ ডিগ্রী প্যানোরোমা চিত্র দেখে থাকবেন। আমাদের দেশে এই ধরনের আলোকচিত্র দেখা যায় না। পাশ্চাত্যদেশে এই ধরনের আলোকচিত্রের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। ফটোশপ ব্যবহার করে একটি সাধারণ আলোকচিত্রকে কিভাবে একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন আংগিকে পরিবেশন করা যায় , তা এই টিউটোরিয়ালে বর্ণনা করা হয়েছে । ৩৬০ ডিগ্রী প্যানোরোমা –এর জন্য প্যানোরোমিক চিত্র হলে সবচেয়ে ভালো হয় । আজকাল স্মার্ট ফোনগুলোতে প্যানোরোমা ছবি তোলার প্রযুক্তি রয়েছে। আপনার ক্যামেরায় প্যানোরামা ফিচারটি থাকলে সেটি ব্যবহার করে ছবি তুলতে পারেন ।  নিচের প্যানোরোমিক ৩৬০ ডিগ্রী ছবিটি দেখুন:

৩৬০ ডিগ্রী  প্যানোরোমা


সাধারন ছবি ব্যবহার করেও প্যানোরোমিক ৩৬০ ডিগ্রী ছবি বানাতে পারেন, সেক্ষেত্রে ফটোশপের ক্রপ টুলটি ব্যবহার করতে হবে।  এখানে  মানিকগঞ্জের বালিআটি রাজবাড়ীতে আমার তোলা একটি প্যানোরোমা ছবিটি ব্যবহার করেছি।

প্যানোরোমা আলোকচিত্র


ধাপ-১: ছবিটি ফটোশপে ওপেন করুন। এখানে আমার ছবিটিতে দু’পাশের গাছ-পালা ক্রপ টুল ব্যবহার করে, বাদ দিয়েছি। ইমেজ থেকে ইমেজ সাইজ-এ যান (Image-Image Size) । ইমেজ সাইজ উইন্ডোতে ছবির আকার দেখা যাবে। ( Constrain Proportions  ) প্রপার্টি আনচেক করে দিন । (Width) মান যা আছে সেই মানটি (Height)-তে বসান । (OK) চাপ দিন । ছবিটি বর্গাকারে দেখা যাবে।


ধাপ-২: ইমেজ মেনু থেকে (Rotate Canvas) যান এবং (180) সিলেক্ট করুন। ছবিটি ১৮০ ডিগ্রি উল্টে যাবে।



ধাপ-৩: এ পর্যায়ে (Filter) ড্রপ ডাউন মেনু থেকে (Distort) এবং সেখান থেকে (Polar Coordinates) সিলেক্ট করুন। (Polar Coordinates)উইন্ডোটি ওপেন হবে। লক্ষ্য করুন, (Rectangular to Polar) চেক দেওয়া আছে । (OK) চেপে বের হয়ে আসুন ।



ধাপ-৪: এ পর্যায়ে ছবিটি বিভিন্ন এ্যাংগেলে ঘুরিয়ে আপনার পছন্দমতো জায়গায় নিয়ে যান । আপনার রুচিমাফিক শার্পনেস, স্যাটুরেশান বাড়িয়ে নতে পারেন। খুব সুন্দর একটি ৩৬০ ডিগ্রী প্যানোরামা ছবি পেয়ে গেলেন । আপনার সৃজনশীলতা ব্যবহার করে যেকোন ছবি যেমন, ল্যাšডস্কেপ,সিটিস্কেপ কে ছবিকে ৩৬০ ডিগ্রী প্যানোরমায় পরিবর্তিত করতে পারবেন ।  বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন, আশা করি সবাই পছন্দ করবে।

লালবাগ কেল্লা, ঢাকা
ঢাকার বসতি


ভালো ভাবে বোঝার জন্য নিচের ভিডিওটি দেখুন 








আর সর্বশেষে এই টিউটোরিয়াল সর্ম্পকে আপনার মতামত ব্যক্ত করলে আনন্দিত হবো ।